বিতর নামাজ মুসলমানদের দৈনিক ইবাদতের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, যা এশার নামাজের পর আদায় করতে হয়। বিতর নামাজ ইসলামে ওয়াজিব বা বাধ্যতামূলক ইবাদত হিসেবে বিবেচিত। বিশেষত রাতে এই ইবাদত আল্লাহর নৈকট্য লাভ এবং সওয়াব অর্জনের সুযোগ দেয়। বিতর নামাজ সাধারণত তিন রাকাত হয়ে থাকে এবং এটি আদায়ের বিশেষ নিয়ম রয়েছে। আসুন, বিতর নামাজ পড়ার সঠিক পদ্ধতি ও নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
বিতর নামাজের গুরুত্ব
বিতর নামাজ ইসলাম ধর্মে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এটি প্রতিদিনের এশার নামাজের পরে আদায় করা হয় এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। হাদিসে বলা হয়েছে, মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) বিতর নামাজকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন এবং এর নিয়মিত আদায়ের জন্য সাহাবিদের পরামর্শ দিয়েছেন।
বিতর নামাজের রাকাত সংখ্যা
বিতর নামাজ তিন রাকাত নিয়ে গঠিত। এটি একটানা তিন রাকাত পড়া সুন্নত এবং মহানবী (সা.) এর প্রচলিত নিয়ম। তিন রাকাতের মধ্যে তৃতীয় রাকাতে বিশেষ দোয়া (দোয়া কুনুত) পাঠ করা হয়, যা এই নামাজের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।
বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম
বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম অনেক সহজ, তবে এতে কিছু নির্দিষ্ট ধাপ রয়েছে। প্রতিটি ধাপ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন সহজ হয়।
ধাপ ১: প্রথম ২ রাকাত নামাজ
1. নিয়ত করুন: প্রথমে মনে মনে নিয়ত করুন যে আপনি বিতর নামাজ আদায় করছেন।
2. সুরা ফাতিহা ও ছোট সুরা: প্রথম রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ার পর যেকোনো একটি ছোট সুরা পড়ুন।
3. দ্বিতীয় রাকাত: দ্বিতীয় রাকাতেও সুরা ফাতিহা ও অন্য একটি ছোট সুরা পড়ুন। এরপর রুকু ও সেজদা আদায় করে তাশাহুদের জন্য বসুন।
ধাপ ২: তৃতীয় রাকাত নামাজ
1. তৃতীয় রাকাত শুরু: দ্বিতীয় রাকাতের তাশাহুদের পর উঠে তৃতীয় রাকাত শুরু করুন।
2. সুরা ফাতিহা ও ছোট সুরা: তৃতীয় রাকাতে সুরা ফাতিহা এবং অন্য একটি ছোট সুরা পড়ুন।
3. দোয়া কুনুত: তৃতীয় রাকাতে সুরা ফাতিহা এবং ছোট সুরা পড়ার পর, রুকুতে যাওয়ার আগে হাত তুলে দোয়া কুনুত পড়ুন। দোয়া কুনুত পড়তে না জানলে “আল্লাহুম্মা ইন্না নাসতাইনুকা…” পড়া যেতে পারে।
ধাপ ৩: নামাজ সম্পন্ন করা
দোয়া কুনুত পড়ার পর রুকু এবং সেজদা করুন। তারপর তাশাহুদ, দরুদ এবং সালাম দিয়ে বিতর নামাজ শেষ করুন।
বিতর নামাজে দোয়া কুনুতের গুরুত্ব
দোয়া কুনুত বিতর নামাজের বিশেষ অংশ। এটি তৃতীয় রাকাতে রুকুতে যাওয়ার আগে পড়তে হয় এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য ও ক্ষমা প্রার্থনার দোয়া হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। দোয়া কুনুত পাঠ করলে আল্লাহর কাছে বিনম্রভাবে প্রার্থনা জানানো হয় এবং তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ কামনা করা হয়।
বিতর নামাজের সময়
বিতর নামাজ এশার নামাজের পর থেকে ফজরের পূর্ব পর্যন্ত আদায় করা যায়। তবে নিয়মিত এশার নামাজের পরে এটি আদায় করাই উত্তম। রমজান মাসে তারাবির পর এই নামাজ আদায় করা হয়, যা একটি ঐতিহ্য।
উপসংহার
বিতর নামাজ ইসলামে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত, যা দৈনিক ইবাদতের পূর্ণতা আনে। সঠিক নিয়মে বিতর নামাজ আদায় করে আমরা আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারি এবং তাঁর অসীম রহমত ও দয়া লাভের আশা করতে পারি। আল্লাহ আমাদের বিতর নামাজ সঠিকভাবে আদায় করার তৌফিক দিন।