ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম: পূর্ণ সাওয়াবের জন্য সঠিক পদ্ধতি
ইশরাক নামাজ ইসলামের অন্যতম সুন্নত নামাজ, যা ফজরের নামাজের পরে সূর্য ওঠার পর পড়া হয়। এটি বিশেষ সওয়াবের উৎস হিসেবে পরিচিত এবং এটি মুমিনদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি উত্তম মাধ্যম। ইশরাক নামাজ সম্পর্কে জানলে ও নিয়ম মেনে পড়লে এর বিশেষ সওয়াব অর্জন করা সম্ভব। আসুন জেনে নিই ইশরাক নামাজের নিয়ম ও এর ফজিলত সম্পর্কে।
ইশরাক নামাজের ফজিলত
ইশরাক নামাজ আল্লাহর বিশেষ বরকত লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। এটি পড়লে মহান আল্লাহ রোজগার, শান্তি, এবং কল্যাণের পথে পরিচালিত করেন। হাদিসে বলা হয়েছে যে, যে ব্যক্তি ফজরের নামাজ পড়ে একাগ্রচিত্তে সূর্য ওঠা পর্যন্ত বসে থাকেন এবং পরে ইশরাকের নামাজ আদায় করেন, আল্লাহ তাকে এক সম্পূর্ণ হজ ও ওমরার সওয়াব প্রদান করেন।
ইশরাক নামাজের সময়
ইশরাক নামাজের সময় সূর্য ওঠার কিছুক্ষণ পর শুরু হয়। সাধারণত, সূর্যোদয়ের প্রায় ১২ থেকে ১৫ মিনিট পর এই নামাজ আদায় করা যায় এবং এটি শুরু হওয়া থেকে কিরণ ওঠার সময় পর্যন্ত পড়া যায়। তাই প্রতি দিন ভিন্ন হতে পারে, তাই সঠিক সময় জানার জন্য স্থানীয় সময়সূচির সাথে মিলিয়ে নেওয়া উচিত।
ইশরাক নামাজ পড়ার নিয়ম
ইশরাক নামাজ আদায়ের পদ্ধতি খুবই সহজ এবং সুন্নাহ সম্মত। ইশরাক নামাজ সাধারণত দুই বা চার রাকাত পড়ে আদায় করা হয়। এখানে ইশরাক নামাজ পড়ার বিস্তারিত নিয়ম তুলে ধরা হলো:
১. নিয়ত করা
ইশরাক নামাজ পড়ার জন্য প্রথমে নিয়ত করতে হয়, যেটি হলো:
“আমি দুই রাকাত ইশরাক নামাজ পড়ছি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, কিবলামুখী হয়ে।”
২. সূরাহ পড়া
ইশরাক নামাজের প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহা এবং একটি ছোট সূরা পড়া সুন্নত। ফাতিহার পর যে কোনও ছোট সূরা, যেমন সূরা ইখলাস, সূরা নাস, সূরা ফালাক বা সূরা কাওসার পড়া যেতে পারে।
৩. রাকাত সংখ্যা
ইশরাক নামাজ মূলত দুই রাকাত পড়া হয়, তবে চার রাকাত পর্যন্ত পড়া যায়। এতে বেশি সওয়াবের আশা করা যায়।
৪. সালাম ফেরানো
প্রথম দুই রাকাত শেষ করে সালাম ফেরানো হয়। যদি চার রাকাত পড়তে চান, তবে প্রথম দুই রাকাত শেষ করে সালাম ফেরানোর পর পুনরায় আরও দুই রাকাত পড়া যেতে পারে।
ইশরাক নামাজ পড়ার বিশেষ দোয়া
ইশরাক নামাজ শেষে কিছু নির্দিষ্ট দোয়া ও জিকির করা সুন্নত। দোয়া করে আল্লাহর কাছে নিজের প্রয়োজন জানানো এবং তাঁর সন্তুষ্টি কামনা করা উত্তম। ইশরাক নামাজ শেষে এই দোয়াগুলো পড়া যায়:
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা রিদাকা ওয়াল জান্না, ওয়াআ’উজুবিকা মিন সাখাতিকা ওয়ান-নার।”
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার সন্তুষ্টি ও জান্নাত প্রার্থনা করছি এবং আপনার অসন্তুষ্টি ও জাহান্নাম থেকে আশ্রয় চাই।”
ইশরাক নামাজের সওয়াব ও বরকত
ইশরাক নামাজ আল্লাহর কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি ইবাদত। ইশরাক পড়ার মাধ্যমে দেহ ও মন প্রশান্তি পায়, এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভের সুযোগ তৈরি হয়। হাদিসে বর্ণিত আছে যে, ইশরাক নামাজ পড়লে দৈনন্দিন কাজে বরকত আসে এবং আল্লাহ বান্দাকে পূর্ণ হজ ও ওমরার সওয়াব দান করেন।
উপসংহার
ইশরাক নামাজ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের এক অনন্য সুযোগ। নিয়ম মেনে, নিয়ত সহকারে ইশরাক নামাজ আদায় করলে তা আল্লাহর নৈকট্য লাভের সহায়ক হয় এবং দুনিয়া ও আখিরাতে বরকত নিয়ে আসে। সুতরাং, প্রতিদিন ইশরাক নামাজ আদায়ের অভ্যাস গড়ে তুলুন এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে অগ্রসর হোন।