বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম ও দোয়া: সঠিক পদ্ধতি ও গুরুত্ব
বিতর নামাজ ইসলামের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত, যা প্রতিদিন রাতের শেষ ইবাদত হিসেবে আদায় করা হয়। এটি সুন্নতে মুয়াক্কাদা, অর্থাৎ এটি এমন একটি সুন্নত যা নবী করিম (সা.) নিয়মিত আদায় করতেন এবং এটি আমাদের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ। বিতর নামাজ আদায় করলে রাত্রিকালীন ইবাদতের পূর্ণতা লাভ হয় এবং আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের সুযোগ তৈরি হয়। আসুন, বিতর নামাজের নিয়ম, পদ্ধতি ও দোয়া সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিই।
বিতর নামাজের গুরুত্ব
বিতর নামাজ ইসলামের পাঁচ ফরজ নামাজের পর আদায় করা ওয়াজিব ইবাদত। নামাজের ক্ষেত্রে বিতরের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, এবং এই নামাজ সম্পর্কে নবী করিম (সা.) বলেছেন:
“বিতর নামাজকে যথাসম্ভব রাত্রির শেষ ইবাদত হিসেবে আদায় করো।” (সহিহ মুসলিম)
তাহাজ্জুদসহ অন্যান্য নফল ইবাদত করার পর বিতর নামাজ পড়া হয়। যারা তাহাজ্জুদ পড়ে থাকেন, তাদের জন্য বিতর নামাজ তাহাজ্জুদের পর পড়া উত্তম, কিন্তু যাঁরা তাহাজ্জুদে উঠতে পারেন না, তারা এশার নামাজের পর বিতর নামাজ পড়ে নিলে ইবাদতের পূর্ণতা অর্জন করতে পারেন।
বিতর নামাজ কত রাকাত
বিতর নামাজ সাধারণত তিন রাকাত আদায় করা হয়। তিন রাকাত বিতরের নিয়ম সুন্নাহসম্মত, এবং এটি একত্রে পড়া যায়।
বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম
বিতর নামাজের প্রতিটি রাকাতকে সুন্নাহর নিয়ম অনুযায়ী পড়া হয়। এখানে তিন রাকাত বিতর নামাজের পদ্ধতি দেওয়া হলো:
১. প্রথম দুই রাকাত পড়া
প্রথম দুই রাকাত ঠিক অন্যান্য নামাজের মতোই পড়া হয়। প্রতিটি রাকাতে সূরা ফাতিহা এবং একটি ছোট সূরা পড়া হয়। দুই রাকাতের শেষে তাশাহহুদ (আত্তাহিয়াতু) পড়ে সালাম না ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হয়।
২. তৃতীয় রাকাতে কুনুত দোয়া পড়া
তৃতীয় রাকাতে সূরা ফাতিহা এবং একটি ছোট সূরা পড়ার পর রুকুর আগে হাত তুলে কুনুত দোয়া পড়তে হয়। কুনুত দোয়া হচ্ছে:
“আল্লাহুম্মা ইন্না নাস্তাঈনুকা, ওয়া নাসতাগফিরুকা, ওয়া নুমিনু বিকা, ওয়া নাতাওয়াক্কালু আলাইক, ওয়া নুসনি আলাইক।”
(কুনুত দোয়ার সম্পূর্ণ দোয়াটি পড়তে পারেন, যা বেশ লম্বা)
দোয়া কুনুত না জানা থাকলে অন্যান্য সাধারণ দোয়া পড়া যেতে পারে।
৩. রুকু ও সিজদা আদায় করে সালাম ফিরানো
কুনুত দোয়া শেষে রুকুতে যান এবং নিয়মমাফিক রুকু, সিজদা করে নামাজ শেষ করুন। সালাম ফিরিয়ে নামাজ সম্পূর্ণ করুন।
বিতর নামাজের দোয়া
বিতর নামাজ শেষে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দোয়া করা যেতে পারে। এ সময়ে আপনার প্রয়োজনীয় ও মনের আবেগপ্রবণ দোয়াগুলো আল্লাহর দরবারে পেশ করতে পারেন। কুনুত দোয়া ছাড়াও অন্যান্য বিশেষ দোয়াও পড়ে আল্লাহর কাছে নিজের জন্য মাগফিরাত চাইতে পারেন।
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা, ওয়াত্তুকা, ওয়াল আ’ফাফা, ওয়াল গিনা”
অর্থ: “হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে হেদায়েত, তাকওয়া, পবিত্রতা এবং সম্পদ প্রার্থনা করছি।”
বিতর নামাজের সুন্নাহ ও নিয়ম
- বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত নফল পড়া উত্তম।
- যাঁরা রাতে তাহাজ্জুদ পড়েন, তাঁরা বিতর নামাজটিকে সবশেষ নামাজ হিসেবে আদায় করেন।
- এশার নামাজের পর কিছু সময় দিয়ে যদি বিতর নামাজ আদায় করা হয়, তা ভালো বলে গণ্য হয়।
উপসংহার
বিতর নামাজ আমাদের দৈনিক ইবাদতের পূর্ণতা আনে এবং আল্লাহর বিশেষ রহমত লাভের মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। সঠিক নিয়ম অনুসারে এই নামাজ পড়লে আল্লাহ আমাদের ইবাদতকে গ্রহণ করেন এবং এতে নেকি অর্জিত হয়। সুতরাং, বিতর নামাজ পড়া প্রতিদিনের নিয়মিত ইবাদতের অংশ হিসেবে রাখা উচিত। আল্লাহ আমাদের এই ইবাদত কবুল করুন এবং আমাদের নামাজকে পরিপূর্ণ করুন।
বিতর নামাজের রাকাত:
বিতর নামাজ ৩ রাকাত ওয়াজিব। এটি একত্রে পড়তে হয় এবং ভিন্নভাবে আদায় করা হয়।
বিতর নামাজ পড়ার নিয়ম:
দোয়া কুনুত (আরবি):
দোয়া কুনুত (বাংলা উচ্চারণ):
“আল্লাহুম্মা ইহদিনি ফিমান হাদাইতা, ওয়া আফিনি ফিমান আফাইতা, ওয়া তাওয়াল্লানি ফিমান তাওাল্লাইতা, ওয়া বারিক লি ফিমা আ’তাইতা, ওয়া ক্বিনি শার্রা মা ক্বাদাইতা, ফা-ইন্নাকা তাক্বদ্বি ওয়ালা ইউক্বদ্বা আলাইকা, ওয়াইন্নাহু লা ইয়াযিল্লু মান ওয়ালাইতা, ওয়ালা ইয়ািয্জু মান আ’দাইতা, তাবারাক্তা রাব্বানা ওয়া তা’লাইতা।”
দোয়া কুনুত (বাংলা অনুবাদ):
“হে আল্লাহ! তুমি আমাকে তাদের মধ্যে সঠিক পথে পরিচালিত কর যারা সঠিক পথে চলে। আমাকে তাদের মধ্যে নিরাপদ রাখ যারা নিরাপদ থাকে। আমাকে তাদের মধ্যে আপন করে নাও যাদেরকে তুমি আপন করেছ। তুমি আমাকে তাদের জন্য বরকত দাও যা তুমি আমাকে দান করেছ। আমাকে তোমার ফায়সালার অনিষ্ট থেকে রক্ষা কর। নিশ্চয়ই তুমি ফায়সালা দাও, তোমার বিরুদ্ধে কেউ ফায়সালা দিতে পারে না। তুমি যার সহায়, সে কখনো অপমানিত হয় না, আর তুমি যার বিরুদ্ধ, সে কখনো সম্মানিত হতে পারে না। হে আমাদের রব! তুমি কল্যাণময় এবং মহিমান্বিত।”
গুরুত্বপূর্ণ টিপস:
উপসংহার:
বিতর নামাজ আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপায়। এটি নিয়মিত আদায়ের মাধ্যমে ইবাদতের পূর্ণতা লাভ হয়। সঠিক নিয়ম ও নিয়তের সঙ্গে এটি পড়া অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ।